ই-কমার্স আধুনিক যুগের ডিজিটাল ছোঁয়া। হাতের মুঠোয় নিজের পছন্দের জিনিস সহজেই পাওয়ার সেরা প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ই-কমার্স। বলা যায় ই-কমার্স এখন হাতের মোয়া, চাইলেই সহজে এক ক্লিকে সবকিছু পাওয়া সম্ভব। তবে ই-কমার্সের এই সহজতর বিষয়টি আদৌও সহজ ছিলো না৷ আসুন ই-কমার্সের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জেনে আসি। ই-কমার্স সম্পূর্ণ তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর একটি মাধ্যম। এই ধারণাটি বেশ পুরাতন হলেও এটার বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৯১ সাল থেকে৷ জনপ্রিয়তা পেতে আরো ৪ বছর সময় লেগেছিলো অর্থাৎ ১৯৯৪ সালে ইন্টারনেটের অগ্রগতিতে এটি সামনে আসে।
২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এবং পশ্চিমা বিশ্বে বেশ কয়েকটি ব্যবসা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে পরিসেবাগুলো উপস্থাপন করে। তখন Albertsons এবং Safeway নামের দুটি সুপারমার্কেট সফল ভাবে ই-কমার্স শুরু করে। ২০০১ সালের শেষের দিকে ই-কমার্স এর বিজনেস টু বিজনেস মডেলে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়েছিলো। ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্র কিংবা উন্নত দেশগুলোতে ই-কমার্স বহুল প্রচলিত ও ব্যবহারকৃত মাধ্যম হলেও বাংলাদেশ তা পরিচিতি পেয়েছে বেশ খানিকটা সময় পরে। বাংলাদেশের প্রথম ই-কমার্স ওয়েবসাইট মুন্সিজি ডট কম।
এরপর ক্রমান্বয়ে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠে আসে ই-কমার্স সেক্টরে। এছাড়া ই-কমার্স সেক্টরকে উঠিয়ে আনতে ই-ক্যাবের মূখ্য ভূমিকা চমৎকারভাবে ফুটে উঠে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ই-কমার্স সেক্টর বেশ সুপরিচিত একটি মাধ্যম। যেটা আজ থেকে চার পাঁচ বছর আগেও ছিলো না। এখনও এটার প্রসার শহর কেন্দ্রীক বেশি হওয়ায় গ্রাম ই-কমার্সের সুবিধা অতোটা বিস্তার লাভ করেনি। তবে গত কয়েকবছরে এটার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা প্রসারিত হয়েছে আর সেটা দেশীয় পণ্যের মাধ্যমে।
আর দেশীয় পণ্যকে বাঁচিয়ে তুলতে এমন প্রয়াসে ই-ক্যাবের সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদ এর অবদান অনস্বীকার্য। ই-কমার্সের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেকটা সহজ হয়ে উঠেছে। খুব সহজেই যে কোন কিছু বিশেষ করে দেশীয় এক জেলার পণ্য অন্য জেলায় বসে সহজেই ভোগ করতে পারছে। নিঃসন্দেহে এটা প্রশংসনীয়। ক্রেতাদের সুবিধার্থে ই-কমার্স সেক্টরে নানাবিধ সুযোগ সুবিধা আনলেও পশ্চিমা বিশ্বের মতো এখনো আপডেট আমরা হতে পারিনি।
আমরা সাধারণত কোন পণ্য সুপারশপে বা বাজারে কিনতে গেলে দামাদামি বা ক্যাটাগরি দেখে সুবিধামতো কিনি। এই সুবিধাটি আমাদের ই-কমার্স উদোক্তাদের জন্যও প্রযোজ্য। আর এ কারণেই পণ্যের শ্রেণিবিন্যাস করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ই-কমার্স সেক্টরে যেহেতু হাত দিয়ে দেখে বুঝে কেনার সুযোগ নাই, তাই এটা কেনার পর মিল-অমিল নিয়ে ক্রেতারা অনেক মন্তব্য করে থাকেন। আর এই অভিযোগগুলো নিরুপণে আমরাও যদি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্যের শ্রেণিবিন্যাস করে ক্রেতার সামনে তুলে ধরি তবে ক্রেতার জন্য পণ্য নেওয়া আরো সহজ হবে।
পণ্যের শ্রেণিবিন্যাসে আমরা এমনটা করতে পারি- বিশেষ করে খাবার আইটেমের ক্ষেত্রে তিনটা ক্যটাগরি রাখতে পারি। যেমন- অর্গানিক, এ প্লাস, বেসিক। অনেকেই অথেনটিক অর্গানিক পণ্য চায় তাদের জন্য। এই অর্গানিকটা প্রেফার করতে পারি। আবার অনেকে একটু কম মানের তাদের জন্য এ প্লাস। আবার যারা আরেকটু কম দামের তাদের জন্য বেসিক। তবে পণ্যের কোয়ালিটি কমবে না প্রতিটি পণ্যের কোয়ালিটি ঠিক রেখে আমরা যদি এটা করি তবে ক্রেতাদের জন্য সুবিধা ও সহজতর হয়ে যায়। যত দিন যাচ্ছে মানুষের জীবন ততটা সহজ করে দিচ্ছে পৃথিবী।
আর এই সহজকরণে ই-কমার্স আমাদের জীবনের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে নিজের দেশীয় পণ্য দেশীয় সংস্কৃতি ঐতিহ্য-ইতিহাস যেগুলোর সঙ্গে আমাদের হাজার হাজার বছর জড়িয়ে আছে সেগুলো পুনরায় এই ই-কমার্সের হাত ধরে উঠে আসছে৷ কাজেই আমাদের দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স সেক্টরেকে আরো মজবুত ও সহজকরণে সকলকে সম্মিলিত ভাবে কাজ করে যেতে হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।